শরীর সুস্থ রাখার ৮ টি টিপস
প্রতিটি মানুষ সুস্থ থাকতে চায়। পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেই যিনি কিনা সুস্থ থাকতে চায় না। পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। সুস্থ থাকার জন্য কিছু স্বাস্থ্য নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। মনোবল সবল রাখতে শরীরকে সবসময় কর্মঠ করে রাখতে হবে। শরীরকে সুস্থ রাখা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। নিচে আমরা শরীর সুস্থ রাখার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নিয়ম কানুন নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
পেজ সূচিপত্রঃ শরীর সুস্থ রাখার ৮টি টিপস
- সঠিক সময় খাবার খাওয়া সঠিক সময় সঠিক খাবার খাওয়া
- সবজি ও ফলমূল খাওয়া
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
- শরীরের জন্য ব্যায়াম
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাস শরীরে প্রবেশ করা
- শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়মিত চেকআপ করা
- শেষ কথা
সঠিক সময় সঠিক খাবার খাওয়া
শরীর সুস্থ রাখার জন্য সঠিক সময়ে অতি প্রয়োজন। খাবার হজম
করতে পাচনতন্ত্রের প্রায় চার ঘন্টা সময় লাগে। খাবার খাওয়ার পর যতই কম খাওয়ার
হোক না কেন তা হজম করতে একটা নির্দিষ্ট সময় নাই। তাই সঠিক সময়ে খাবার না খেলে
তা শরীর ভালো হবে গ্রহণ করতে পারে ।
যে কোন কাজ করার জন্য লাগে শক্তি আর এই শক্তি আছে খাবার থেকে।
শারীরিক ও মানসিক সকল কাজকর্মের জন্য প্রয়োজন শক্তির, অর্থাৎ আমাদের
খাবার প্রয়োজন বলে যে কোনো খাবার যখন তখন চাইলেই খাওয়া যাবে না। সারাদিনে তিন
বেলা সময় নিয়ে ভালোভাবে খেতে হবে।
রাত্রের এবং দুপুরের খাবারের মাঝখানে যদি পর্যাপ্ত সময়ের ব্যবধান না থাকে তাহলে
অধম হওয়ার সমস্যা হতে পারে। রাত্রে খাবারের পর যেহেতু শরীর অনেকক্ষণ খাওয়া পায়
না তার জন্য আমাদের সকাল সকাল নাস্তা করে নেয়া ভালো। ডাক্তারের
পরামর্শতে সকালে ৭-৮ টার মধ্যে খাওয়া সেরে ফেলুন। দুপুরের খাবার
১২টা থেকে ২টা এর মধ্যে খাওয়া উচিত এবং রাতের জন্য ৯টার আগে রাতের
খাবার খাওয়া উচিত।
সবজি ও ফলমূল খাওয়া
সবজি ও ফলমূল খাওয়া আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শরীর সুস্থ রাখার
জন্য অর্থাৎ শরীরকে সবল রাখতে ফল সবজি খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। রান্না করার
খাবারের চেয়ে কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া শরীরের জন্য অনেক বেশি পুষ্টিকর। তা
বলে সবজি ন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবজি ও ফলমূল রাখুন।
কাঁচা ফল ও সবজিকে লাইফ ফুড বলা হয়। শরীর সুস্থ রাখতে আমাদের
ভিটামিন, মিনারেল , প্রোটিন, ফ্যাট আরো অন্যান্য সুষম খাদ্য খাওয়া
প্রয়োজন। এক এক ফলমূল শাকসবজি থেকে এক এক পুষ্টিগুণ রয়েছে। প্রোটিনঃ
ছোলা, মটর ডাল উদ্ভিজ প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। এছাড়া ব্রকলি ও কপি । ফলের
মধ্যে পেয়ারা, বাদাম।
চর্বিঃ যদিও স্বাস্থ্যকর চর্বি পাওয়া সহজ নয় তবে বেশ বাক সবজি ফল বাদাম
ও বীজ চাহিদা পূরণ করতে পারে। ভিটামিনঃ বেশিরভাগ ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা
মেটানো হয় সবজি ও ফলমূল থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে ৮০ গ্রাম হিসেবে
দৈনিক পাঁচ পরিবেশনে ফল সবজি গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান
আমরা জানি পানির অপর নাম জীবন। প্রতিদিন আমাদের শরীর নানাভাবে নানান রকম কাজ
করে। সে কাজের ধকল মেটাতে পানি পান করা আবশ্যক। দিনে কতটুকু পানি পান করা
প্রয়োজন তা আমরা অনেকেই জানিনা। প্রতিদিন পানি পান করা সু স্বাস্থ্য,
শক্তি এবং ত্বকের উজ্জ্বলতার ধরে রাখার রহস্য।
বেশি বেশি পানি পান করলে দেহের ওজন কমে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
একটা মানুষের দৈনিক আট ক্লাস বা প্রায় 2 লিটার পানি পান করলে আমাদের
শরীর প্রয়োজনের থেকে বেশি আদ্র থাকে। এর পরিবর্তে আমাদের দেড় লিটার থেকে
এক লিটার ৮০০ মিলিলিটার পানি পান করা উচিত।
আমাদের শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদের বেশি বেশি শুদ্ধ
পানি পান করা আমাদের প্রয়োজন। আবার খাবার গ্রহণের পূর্বে অন্তত ৩০ মিনিট
পূর্বে পানি পান আবার খাদ্য গ্রহণের পর কমপক্ষে এক ঘন্টা পর পানি খাওয়া দরকার।
খাওয়ার সময় সময় নিয়ে পানি পান করতে হবে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।
প্রতিদিন নিয়ম মত ঘুমানো যেমন দরকার তেমনি পর্যাপ্ত বিশ্রাম দরকার। একটা মানুষ
কাজ করার পর যদি সে বিশ্রাম না নেয় তাহলে সে কাজে তার মন থাকবে না অথবা
সে কাজে তার মন বসবে না।
গতিশীল পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানারকম কাজকর্ম করে
থাকি। কিন্তু পর্যাপ্ত বিশ্রাম, বিরতি কিংবা ঘুম ছাড়া যে ওরে ও মনের প্রশান্তি
অর্থহীন তা আজকাল আমরা ভুলে যাচ্ছি। আবার অলসতা ও অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে
বয়ে আনছে আমাদের জীবনে অনেক ঝুঁকি।
বয়স ভেদে ঘুমের তারতম্য থাকে। শিশুরা সাধারণত বেশি ঘুমিয়ে থাকে। আবার একজন
পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো যথেষ্ট। কিন্তু বয়স্কদের জন্য
বেশি হতে পারে। দুপুরের বিশ্রাম দিনের অন্যান্য কাজের শক্তি যোগায়। ঘুমের
সময়টাই মোবাইল, ল্যাপটপে, কম্পিউটার, টিভি এবং অন্যান্য ডিভাইস থেকে দূরে
রাখুন।
শরীরের জন্য ব্যায়াম
শারীরিক ব্যায়াম হলো যেকোনো শারীরিক কার্যক্রম যা শরীরের সুস্থতা বৃদ্ধিতে
সাহায্য করে। বিভিন্ন কারণে মানুষ শারীরিক ব্যায়াম করে থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম
মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে পুনরায়
ফিরিয়ে আনে।
একজন মানুষকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা নূন্যতম শারীরিক ব্যায়াম
করা আবশ্যক। শারীরিক ব্যায়াম করার জন্য অনেকগুলো ব্যায়াম রয়েছে যেমন দৌড়ানো,
সাইকেলিং, সাঁতার । আরও রয়েছে ওজন উত্তোলন যেমন ডাম্বেল ব্যবহার করা।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা আখ্যায়িত করেন যে অলৌকিক ও আশ্চর্যজনক ওষুধ হল
ব্যায়াম। শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রক্ষার্থে ব্যায়াম করা আমাদের জন্য
অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাস শরীরে প্রবেশ করা
শরীর সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো ও বাতাস করানো শারীরিক ও মানসিক
স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আলোর অনেক উপকারিতা রয়েছে। বেশি সূর্যালোক থেকে
ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয় যা আমাদের হাড় ও পেশির স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
মন উন্নতি সূর্যের আলো ডোপামিন ও সেরোটোনিন এর উৎপাদন বাড়ায়, যা মন
ভালো রাখতে সাহায্য করে। এখনকার অনেক মানুষ রয়েছে যারা সব সময় ঘরের ভেতরে থাকে।
যাতে তাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো পায় না এবং তার ফলে শরীরে অনেক
সমস্যা দেখা যায়।
বাতাস, অক্সিজেন সরবরাহ, সতেজ বাতাস আমাদের শরীরের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে
যা কোষের কার্যকারিতা বাড়ায়। শারীরিক কার্যক্রম, বাইরে হাঁটা বা
ব্যায়াম করার সময় সাথে বাতাস সতেজ বাতাস শ্বাস
প্রশ্বাসের উন্নতি করে।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়মিত চেকআপ করা
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রয়েছে কিনা তা সময় সময়ে চেকআপ করা
অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের ভিতরে অনেক সমস্যা রয়েছে
কিন্তু,বাইরে থেকে তা অনুভব করতে পারে না তার ফলে পরবর্তীতে সে সমস্যাটা অনেক বড়
দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে যায়।
শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেমন ব্যায়াম করা প্রয়োজন তেমনি মানসিক স্বাস্থ্য
নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে আমরা কোন রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে
ধরা পড়তে পারে, যা সময়মতো চিকিৎসার আমাদের সুযোগ দেয়। এরই সাথে সাথে আমাদের
মানসিক স্বাস্থ্যও নিয়মিত চেকআপ গুরুত্বপূর্ণ।
সুস্থ থাকলে কাজের উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং অনেক সময় স্বাস্থ্যসেবার খরচ কম হয়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ রাখা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য
অপরিহার্য। যা আপনার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শেষ কথা
উপরের আলোচনায় আমরা আপনাদের শরীর সুস্থ রাখার কয়েকটি উদাহরণ বর্ণনা
করার চেষ্টা করেছি। পৃথিবীর সব মানুষই চায় দুনিয়াতে সুস্থ বেঁচে থাকতে।
সুস্থতা ও সুখী জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিজের যত্ন নেওয়া কখনোই বাদ দিবেন না। সুস্থ থাকুই, সুখী
থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url